Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছ চাষে জাতীয় শত্রু ইঁদুর নিধনে করণীয়

মাছ চাষে

জাতীয় শত্রু ইঁদুর নিধনে করণীয়

কৃষিবিদ মোঃ আলতাফ হোসেন চৌধুরী

১৯৭২ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লার এক জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন মাছ হবে ২য় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭৩ সালে গণভবনের লেকে বঙ্গবন্ধু মাছের পোনা অবমুক্তকরণের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে যুগান্তকারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশাল কর্মযজ্ঞের অন্যতম হলো দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে  গড়ে তোলা। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ব্যাপকভাবে প্রাণিজ (মৎস্য) প্রোটিনের উপর যেমন জাতিকে নির্ভর করতে হয় তেমনি দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৬০% প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পুরণ হচ্ছে মৎস্য থেকে। জনপ্রতি বাৎসরিক মাছ গ্রহণ ২৩.০০ কেজি। মাছের বাৎসরিক চাহিদা ৪৩.৪১ লাখ মে.টন। উৎপাদন হচ্ছে ৪৪ লাখ মে.টন। জনপ্রতি মাছের বার্ষিক চাহিদা ২১.৯০ কেজি, জনপ্রতি মাছের  দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম, আর প্রানিজ আমিষ সরবরাহে মাছের অবদান ৬০ শতাংশ। প্রচলিত আছে পরিবেশে সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ পারস্পরিক দেয়া নেয়ার মাধ্যমে একটি জটিল ও জুতসই খাদ্য শৃঙ্খল তৈরি করে। ইঁদুর নামক প্রাণীটি তার ব্যতিক্রম এবং দেয়ার চেয়ে ক্ষতি করে অনেক বেশি। এটি পরিবেশবান্ধব    সুবিধাজনক প্রাণী নয় বরং ক্ষয়ক্ষতির ‘রাজা’ নামে পরিচিত। ইঁদুর নামক প্রাণীটি মানুষের খাদ্যে ভাগ বসিয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। ইঁদুর বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর অনবরত কাটাকাটির অভ্যাস বিদ্যমান। কাটাকাটি করতে গিয়ে ইঁদুর             কৃষি ফসলের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় রুপালি মাছের ও বেশ ক্ষতি করে। মাছ ও চিংড়ির ঘেরের বিশেষভাবে ক্ষতি করে থাকে। মাছ চাষের উত্তম সময়ে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ঘের বা পুকুরের চারদিকে গর্ত করে এবং গর্ত পর্যায়ক্রমে বড় হয়ে নদী-খাল বা অন্য জলাশয়ের সাথে সংযোগ তৈরি করে। এতে ঘেরে পানি কমে যায়, ঘের/পুকুরের পাড় ভেঙে যায় এবং কৃষকের জন্য বাড়তি ঝামেলা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি ঘের/পুকুরে মাছের খাদ্য খায় এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাছের খাদ্য নষ্ট করে। বর্ষাকালে দরিদ্র কৃষক বাঁধের ধারে বিদ্যমান বরো-পিটে মাছ চাষ করে সাময়িক অর্থ রোজগার করে। সেখানে ইঁদুর চেলা/গর্ত তৈরি করে স্বল্প সময়ের জন্য তেলাপিয়া, পাংগাশ ও পুঁটি মাছ চাষ বিঘ্নিত করে। এ ছাড়াও ইঁদুর খামারের/পুকুরের গভীর ও অগভীর নলকূপের সেচের নালা নষ্ট করে পানির অপচয় করে থাকে।

কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৯৮৩ সাল থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে মৎস্য ও পোলট্রি শিল্প ইঁঁদুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৎস্য ও পোলট্রি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ইঁদুর মৎস্য বা পোলট্রি খামারে গর্ত করে খামারের আর্থিক ক্ষতি করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিভাগের হিসেবে ইঁদুর প্রতিটি মুরগির খামারে বছরে ১৮০০০ টাকার ক্ষতি করে থাকে। যদিও এই বিষয়ে সরকারি/বেসরকারি মৎস্য খামারে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির স্বীকৃত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি তবুও  মৎস্য সেক্টরে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নেহায়েত কম না ।

রুপালি মৎস্য উৎপাদন তিনটি বিষয়ের উপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষয়গুলো হলো- ১. ফিড, ২. রেণু (পোনা), ৩. ব্যবস্থাপনা। বিষয়গুলোর একটির ঘাটতি হলে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। জাতীয় শত্রু ইঁদুর নিধন কার্যক্রমটি মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। অতএব, বুঝতে বাকি থাকেনা এই প্রাণীটি মাছ চাষে কতটুকু ক্ষতির কারণ?

মৎস্য চাষে ইঁদুর নিধনের ব্যবস্থাপনা : মৎস্য চাষে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে কতিপয় ব্যবস্থাপনা নেয়া যেতে পারে। যেমন-

১.            মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য জাতীয় শত্রু ইঁদুরের বাসযোগ্য পরিবেশ ধ্বংস করা। সঠিক উপায়ে পুকুরপাড় প্রস্তুতকরণ (পুকুর শুকানো, তলদেশের পচাকাদা অপসারণ, বার বার চাষ দিয়ে শুকানো এবং চুন প্রয়োগ)।

২.           পানির উন্নত গুণাবলী বজায় রাখা (পিএইচ, অক্সিজেন, এ্যামোনিয়া ইত্যাদি) কারণ ময়লা আবর্জনার দিকে ইঁদুরের ঝোঁক বেশি।

৩.           শীতের শুরুতে পুকুর পাড় মেরামত করা ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে বা প্রয়োজনে গাইডওয়াল বেধে ইঁদুর নিধন করা।

৪.           ইঁদুর ‘প্লেগ’সহ অন্যান্য রোগ ও পরজীবী রোগের প্রধান বাহক তাই সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইঁদুর নিধন জরুরি।

৫.           ব্রুড মাছ ও খামারের নিয়মিত পরিচর্যা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন।

৬.           সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সরবরাহ নির্মিত মৎস্য খামার বা পুকুর সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি করতে হবে এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে উন্নত খামার  গড়ে তুলতে হবে।

৭.           বদ্ধ জলাশয়ের মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ করতে হলে পাড়সমূহ আবর্জনামুক্ত ও সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে।

৮.           পরিবেশবান্ধব চিংড়ির পি.এল (পোস্ট লার্ভি) এর চাষ সম্প্রসারণ করতে হলে হ্যাচারি বা ঘেরের গুদাম/হ্যাচারি ইউনিটে ইঁদুর যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯.           মৎস্য উৎপাদন এবং সরবরাহ কাজে ব্যবহৃত উপাদান যেমন- পিটুইটারি গ্রান্ড (পি.জি), এইচসিজি, ট্রাক, ভ্যান, পিকআপ, জালদড়ি এবং অন্যান্য উপাদানসমূহ গুণগত মানসম্পন্ন হতে হবে যাতে এসবের ভেতর/কোঠরে ইঁদুর বা ইঁদুরের বাচ্চা ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

১০.         ইঁদুর নিধনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরগুলোর মাঝে সমন্বিত ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। 

১১.         সরকারি বেসরকারি মৎস্য খামারের গুদামসমূহে (জাল, নেট, খাবার ইত্যাদির) ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য মাচাং করা এবং বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করা।

১২.         এ ছাড়া সরকার অনুমোদিত ব্রমাডিওলোন ও জিংক    ফসফাইড গ্রুপের ইঁদুরনাশক ল্যানির‌্যাট, ব্রমাপয়েন্ট, জিংক ফসফাইড ইত্যাদি) গুদামে সাবধানে রাখা ও ব্যবহার করা।

অধিক মৎস্য উৎপাদনের চেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যকর ও জীবাণুমুক্ত মৎস্য  উৎপাদন অধিক  শ্রেয়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটির গুরুত্ব অপরিসীম। ইঁদুর একটি  স্থলজ প্রাণী। অতএব, উন্নত জলজ পরিবেশ ও খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে  মাছকে সুস্থ রাখা অধিকতর সহজসাধ্য, কম ব্যয়বহুল, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব। যাই হোক ‘রুপালি মৎস্য চাষ দিচ্ছে ডাক, দরিদ্রতা ঘুচে যাক’ এই প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়ন করতে হলে এবং বর্তমান সরকারের ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে এক কাতারে দাঁড়ানোর জন্য মাছ চাষের জাতীয় শত্রু ইঁদুর নিধনে  কোনো আপস করা যাবে না। এই হোক ইঁদুর নিধনের অঙ্গীকার। ৎ

 

খামার ব্যবস্থাপক, মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার, সদর, লালমনিরহাট। মোবাইল : ০১৭১২৪০৮৩৫৩, ই-মেইল : chowdhari_33@ yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon